ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলসোনারোর বিপদ আরও গভীর, দেশ ছেড়ে পালানোর আগেই ধরা পড়লে ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মধ্যরাতে গ্রেপ্তার। সুপ্রিম কোর্টের মতে, অ্যান্কল-ট্যাগ কাটার চেষ্টা ছিল পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলার অংশ।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
breaking new 2

নিজস্ব সংবাদদাতা:  ব্রাজিলে ফের বিশৃঙ্খলা। সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে শেষমেশ গ্রেপ্তার করল ফেডারেল পুলিশ। শনিবার ভোরবেলায় তাঁর ব্রাসিলিয়ার বাড়িতে পৌঁছে তাঁকে হেফাজতে নেয় কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেকজান্দ্রে দে মোরায়েস স্পষ্ট জানিয়েছেন— বলসোনারো বাড়িতে বসে ইলেকট্রনিক নজরদারি এড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। আদালতের মতে, রাত বারোটার পরে তাঁর অ্যান্কল-ট্যাগ কাটার চেষ্টা ধরা পড়তেই বোঝা যায় পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক দিকে এগোচ্ছে। আদালত এটাকে “একটি সুসংগঠিত অপরাধী চক্রের পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি” বলে অভিহিত করেছে।

এর আগে ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয় মানতে না পেরে সামরিক শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে মিলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উলটে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত হন বলসোনারো। সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর বিরুদ্ধে রায় আসে— কারাদণ্ড ২৭ বছর। মার্কিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরো বিষয়টিকে “উইচ-হান্ট” বলে দাবি করেছিলেন। ব্রাজিলের সঙ্গে বচসায় তিনি ব্রাজিলের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপান, এমনকি বিচারপতিকে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেন। সেই নিয়ে বড় ধরনের কূটনৈতিক সংঘাতেও জড়ায় দুই দেশ। যদিও পরে কিছু শুল্ক শিথিল করা হয় এবং দুই দেশের বাণিজ্য আলোচনা আবার শুরু হয়।

brazil former president

সেদিক থেকে দেখলে বলসোনারোর গ্রেপ্তার একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল না। তাঁর শারীরিক অবস্থাও দীর্ঘদিন ধরেই নাজুক। ২০১৮ সালে নির্বাচনী প্রচারের সময় ছুরিকাহত হওয়ার পর থেকেই তিনি নানা জটিলতায় ভুগছেন। এই কারণেই শেষ পর্যায়ে থাকলেও আদালত তাঁকে গৃহবন্দি রেখে আপিলের সুযোগ দিয়েছিল।

কিন্তু শুক্রবার রাত ঘটনাপরম্পরায় যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। তাঁর ছেলে, সেনেটর ফ্লাভিও বলসোনারো সমর্থকদের পরিবারের গেটেড কমিউনিটির সামনে জড়ো হওয়ার ডাক দেন। সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওতে তিনি “লর্ড অফ দ্য আর্মিস”-এর প্রতি প্রার্থনার কথা বলেন এবং দাবি করেন যে তাঁর বাবাকে “নির্দোষ হয়েও নিপীড়ন করা হচ্ছে।” এর পরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঠিক এই সময়ই নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে পালানোর ইঙ্গিত।

ব্রাজিল জুড়ে এখন চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা। বিচারপতি দে মোরায়েস জানিয়েছেন— ভিড়ের মধ্যেই বলসোনারো দল পালানোর ব্যবস্থা করে রেখেছিল, এবং অ্যান্কল-ট্যাগ কাটার চেষ্টা তারই প্রমাণ। তাই তাঁকে অবিলম্বে কারাগারে নেওয়াই দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন ছিল।

এই গ্রেপ্তারি শুধু একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের পতন নয়, ব্রাজিলের রাজনৈতিক ইতিহাসের নতুন অধ্যায় লিখে দিচ্ছে। দেশে কি আরও অস্থিরতা বাড়বে? সমর্থকদের রাতভর বিক্ষোভ কি আরও বড় আকার নেবে? দৃষ্টি এখন ব্রাজিলের রাস্তায়, আদালতে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায়।