বাবা–মায়ের জঙ্গলবাস কি অপরাধ? তিন শিশুকে নিয়ে তোলপাড় ইতালি

ইতালির আব্রুজো জঙ্গলে থাকা এক পরিবারকে কেন্দ্র করে তোলপাড় দেশ। আদালতের নির্দেশে তিন শিশুকে ফস্টার কেয়ারে পাঠানো হয়েছে, ফলে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
breaking new 1

নিজস্ব সংবাদদাতা: ইতালির আব্রুজোর ঘন জঙ্গলের ভেতর ঘোড়া, গাধা আর মুরগির সঙ্গে স্বপ্নের মতো জীবন কাটাচ্ছিল এক পাঁচ সদস্যের পরিবার। তারা দাবি করত, প্রকৃতির মাঝে নিজেদের তৈরি ছোট্ট স্বর্গেই সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু সেই শান্ত জীবনের উপর আচমকা ঝড় নেমে এসেছে। আদালতের নির্দেশে তিন শিশুকে হঠাৎ করেই বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ফস্টার কেয়ারে পাঠানো হয়েছে। আর সেই সিদ্ধান্ত ঘিরেই ইতালিতে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক।

শনিবার সকালে পুলিশি রোড প্যাট্রোল গিয়ে শিশুদের বাড়ি থেকে সরিয়ে আনে। তাদের রাখা হয়েছে একটি গির্জা–চালিত শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে। মা–ও ওই একই ভবনে থাকছেন, তবে বাবা–মা উভয়েরই সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ খুবই সীমিত। পরিবারটির আইনজীবী জানিয়েছেন, সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে।

স্থানীয় মানুষ এই পরিবারকে ডাকত বিম্বি নেল বোসকো—মানে “জঙ্গলের বাচ্চারা”। কারণ তিন শিশু—একজন আট বছরের, বাকি দুইজন ছ’বছরের যমজ—বাবা–মায়ের সঙ্গে প্রকৃতির কোলে বড় হচ্ছিল। কেউ শহরের ব্যস্ততা, কেউ স্কুলের চাপ—কিছুতেই তারা যুক্ত ছিল না। ঠিক সেই জীবনধারা নিয়ে ইতালি জুড়ে তৈরি হয়েছে তুমুল কৌতূহল ও সমালোচনা।

ইতিমধ্যে লক্ষাধিক মানুষ অনলাইনে আবেদনপত্রে সই করেছে যে এই পরিবারকে ভেঙে দেওয়া অন্যায়, আর শিশুদের বাবা–মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দলে দলে মানুষ বলছেন, “ওরা তো ভালোই ছিল, তাহলে কেন জোর করে পরিবার আলাদা করা হলো?”

italy family

আদালতের আদেশে বাবা–মায়ের নামও প্রকাশ্যে এসেছে। বাবা ন্যাথান ট্রেভালিয়ন, ৫১ বছরের ব্রিটিশ নাগরিক, পেশায় একসময় ছিলেন পেশাদার শেফ। মা ক্যাথরিন বার্মিংহাম ৪৫ বছরের অস্ট্রেলিয়ান লাইফ কোচ ও প্রাক্তন অশ্বারোহী প্রশিক্ষক। আদালত বলেছে, শিশুদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার বিষয়েই এই হস্তক্ষেপ। তবে পরিবার বলছে, তারা কোনো অবহেলা করেননি, বরং সন্তানদের প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে স্বাধীন জীবন দিতে চেয়েছেন।

ইতালি এখন এই একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে একটা বড় সামাজিক প্রশ্নের মুখোমুখি—প্রকৃতি–নির্ভর বিকল্প জীবনযাপন কি অপরাধ? বাবা–মায়ের ভালোবাসা কি সন্দেহের জায়গা তৈরি করে? আদালত কি নিজেদের সীমা ছাড়িয়ে গেল? উত্তরের জন্য পুরো দেশ তাকিয়ে।