বিহারে মায়ের দুধে ইউরেনিয়াম! চাঞ্চল্যকর রিপোর্টে কাঁপছে ছ’টি জেলা

বিহারের ছ’টি জেলায় সদ্যপ্রসূত মায়েদের বুকের দুধে ১০০% ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম পাওয়া গিয়েছে। নতুন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর স্বাস্থ্যঝুঁকির সতর্কবার্তা।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
breaking new 1

নিজস্ব সংবাদদাতা: বিহারের ছ’টি জেলায় এক চাঞ্চল্যকর বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা সামনে এনেছে ভয়াবহ তথ্য। সেখানে সদ্যপ্রসূত মায়েদের বুকের দুধেই পাওয়া গিয়েছে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি—এমন তথ্য আগে কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, গঙ্গা অববাহিকার ওই অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই আর্সেনিক, সিসা ও পারদের মতো ভারী ধাতুর দূষণে বিপর্যস্ত। এবার প্রথমবার প্রমাণ মিলল—মায়ের দুধও সুরক্ষিত নয়।

বিহারের ভোজপুর, সামস্তিপুর, বেগুসরাই, খাগাড়িয়া, কাটিহার ও নালন্দা—এই ছ’টি জেলা থেকে ১৭ থেকে ৩৫ বছর বয়সি মোট ৪০ জন স্তন্যদানকারী মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছেন গবেষকেরা। প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে বিস্তারিত সাক্ষাৎকার করা হয়েছে তাঁদের স্তন্যদানের অভ্যাস, সন্তানের বৃদ্ধি, বাসস্থান ও পরিবেশগত প্রভাব বুঝতে। এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন পাটনার মহাবীর ক্যান্সার সন্‍স্থান অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, লভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটি, নাইপার-হাজিপুর সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা।

সবচেয়ে আতঙ্কজনক তথ্যটি গবেষণাপত্রে স্পষ্ট করে লেখা— “পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১০০% মায়ের দুধেই বিপজ্জনক মাত্রায় ইউরেনিয়াম পাওয়া গিয়েছে।”

mother child

নমুনা অনুযায়ী দূষণের মাত্রা আলাদা হলেও সবক্ষেত্রেই ইউরেনিয়াম-২৩৮ পাওয়া গেছে। কিছু নমুনায় এর পরিমাণ লিটারপ্রতি ৫.২৫ গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আন্তর্জাতিক কোনও সংস্থার পক্ষ থেকে বুকের দুধে ইউরেনিয়ামের গ্রহণযোগ্য সীমা নির্ধারিত হয়নি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে—শিশুর প্রধান খাদ্যসুত্রে এভাবে তেজস্ক্রিয় ভারী ধাতুর উপস্থিতি থাকলে তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে।

নবজাতকের প্রথম কয়েক মাসে বুকের দুধই একমাত্র খাদ্য। আর সেই খাদ্যেই যদি তেজস্ক্রিয় দূষণ থাকে, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কীভাবে সুরক্ষিত থাকবে—এই প্রশ্ন এখন তীব্র হয়ে উঠেছে গবেষকদের সামনে। তাঁরা মনে করছেন, পানীয় জলের উৎস, মাটি ও পরিবেশে ইউরেনিয়াম কীভাবে ছড়াচ্ছে তা নিয়ে অবিলম্বে আরও বড়সড় তদন্ত প্রয়োজন।

বিহারের গ্রামগুলিতে যখন প্রতিদিনের জীবনযাত্রা আগেই ভারী ধাতুর দূষণে জর্জরিত, ঠিক তখনই এই নতুন তথ্য আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে—স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা গভীরভাবে শিকড় ছড়িয়ে ফেলেছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।