অনুপ্রবেশকারীদের ‘সুরক্ষা’? মমতাকে নাম না করেই বিস্ফোরক অভিযোগ শাহের

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জন স্থগিত করার আর্জি জানিয়ে কমিশনকে চিঠি দেওয়ার পরেই সরাসরি আক্রমণ শানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
Amit shah

নিজস্ব সংবাদদাতা:  ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জন কাজ সাময়িক স্থগিত করার আর্জি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই চিঠি নিয়েই রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে। নাম না করলেও মমতার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর অভিযোগ, অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে, ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণে বাধা দেওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে।

শুক্রবার স্বরাষ্ট্র দফতরের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে প্রকাশিত এক বার্তায় শাহ দাবি করেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখতে অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়া শুধু প্রয়োজন নয়, গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষার ক্ষেত্রেও তা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দেশের কিছু রাজনৈতিক শক্তি এই কাজ থামিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর, এমনই অভিযোগ তাঁর। তাঁর কথায়, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার শুদ্ধিকরণ চালাচ্ছে, কিন্তু কিছু রাজনৈতিক নেতার চোখে সেই কাজই যেন ‘অপরাধ’। তাঁর দাবি—অনুপ্রবেশকারীদের ঢাল বানাতেই কমিশনের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শাহের অভিযোগের নিশানায় রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনকে চিঠি লিখে এসআইআর প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি জানান। বিএলও–দের উপর অতিরিক্ত চাপ, প্রশিক্ষণের অভাব এবং ‘পরিকল্পনাহীন’ ভাবে রাজ্য প্রশাসনের উপর দায় চাপানো—এ সবই তুলে ধরেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এই অবস্থায় কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন মাঠের কর্মীরা। তিনি স্পষ্ট ভাষায় লেখেন, চলমান এসআইআর প্রক্রিয়া বন্ধ হোক, বিএলওদের ওপর জবরদস্তি বন্ধ করা হোক এবং তাঁদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক।

Mamata Banerjee

এমনিতেই সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার পর থেকে রাজ্যে বিএলওদের কাজের চাপে অসন্তোষ বাড়ছিল। জলপাইগুড়ির মাল এলাকায় এক বিএলও-র আত্মহত্যা এবং মেমারিতে আরেক বিএলও-র মৃত্যু নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে কমিশনের কাজের ধরন ও চাপের মাত্রা নিয়ে। মাঠের কর্মীরাই বলছেন, দিনরাতের চাপ এখন প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। আর এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি ও শাহের তীব্র প্রতিক্রিয়া নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

তৃণমূল অবশ্য শাহের অভিযোগ মানতে রাজি নয়। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, এসআইআর করতেই পারে কমিশন, তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু সেটা কি দেড় মাসে সম্ভব? দু’বছর ধরে যখন কাজ চলে, তখন হঠাৎ চাপ সৃষ্টি কেন? তাঁর তীর্যক মন্তব্য—“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন কমিশনের হয়ে কথা বলছেন? কেন অন্যের কাজে নাক গলাচ্ছেন?”

রাজ্যের রাজনীতিতে এখন তোলপাড়—ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণ নিয়ে কেন্দ্র–রাজ্যের সংঘাত কি আরও তীব্র হবে, নাকি কমিশন নতুন কোনও নির্দেশ আনবে? জবাব সময়ই দেবে।