নিজস্ব সংবাদদাতা: জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলায় গত সপ্তাহে সীমান্তপারের থেকে ছোড়া মর্টার শেলে প্রাণ হারায় ১২ বছরের যমজ ভাইবোন — জোয়া ও আয়ান খান। একই হামলায় নিহত হন তাদের কাকিমা ও কাকুও। সম্প্রতি পাক সেনার ভারী গোলাবর্ষণের মাঝে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
জোয়া ও আয়ান তাদের ১২তম জন্মদিন পালন করেছিল মাত্র এক মাস আগে। পড়াশোনার ভালো সুযোগের খোঁজে পরিবারটি মাত্র দুই মাস আগে পুঞ্চে ভাড়া বাড়িতে উঠেছিল।
তাদের বাবা, ৪৮ বছরের রমিজ খান, হামলায় গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে জম্মুর এক হাসপাতালে আইসিইউ-তে ভর্তি। তার যকৃৎ (লিভার) শেলের টুকরোয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। সন্তানদের মৃত্যুর খবর এখনো তাকে জানানো হয়নি, কারণ এতে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মা উরশা খান মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন — একদিকে দুই সন্তানের মৃত্যু, অন্যদিকে স্বামীর জীবন-মৃত্যুর লড়াই, এক দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছেন তিনি।
ঘটনার সময় পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মারিয়া ও সোহেল খান পাশে ছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, "জোয়ার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আয়ানের পেটের ভিতরের অংশ বেরিয়ে গিয়েছিল। এক আত্মীয় চেষ্টা করেছিলেন তাকে বাঁচাতে, কিন্তু দুজনেই কয়েক মিনিটের মধ্যে মারা যায়।"
/anm-bengali/media/media_files/AnAtspi9lEQ9Pr0nix97.jpg)
কাঁদতে কাঁদতে মারিয়া বলেন,"ওরা খুবই ভালো ও বুদ্ধিমান ছিল। রমিজ কখনও ওদের বকেনি। যদি উনি জানতে পারেন, উনিও হয়তো আর বাঁচবেন না।"
ঘটনার পর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পৌঁছতেও অনেক দেরি হয়ে যায়। গোলাবর্ষণ দীর্ঘ সময় ধরে চলায় চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সোহেল বলেন, "প্রথমে রাজৌরি, তারপর জম্মু — এইভাবে অনেকটা সময় লেগে যায় হাসপাতালে পৌঁছাতে।"
এখন পরিবার চাইছে রমিজ খানকে দিল্লির কোনও বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হোক উন্নত চিকিৎসার জন্য। সরকারের কাছে তারা এই অনুরোধ জানিয়েছে।
সোহেল আরও বলেন, "এটা শুধু সংঘর্ষ বিরতির লঙ্ঘন নয়। সীমান্তে থাকা সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। প্রতিদিন আমরা ভয় আর মৃত্যুর মধ্যে বাঁচি।"
৭ই মে থেকে শুরু হওয়া সীমান্ত উত্তেজনায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৭ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫ জন নিরাপত্তাকর্মীও রয়েছেন। বহু মানুষ আহত হয়েছেন। পাকিস্তান থেকে মর্টার হামলা ও ড্রোন স্ট্রাইকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
এই হামলা শুরু হয় ২২ এপ্রিল পাহেলগামে হওয়া জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পর থেকে। সেই হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারান, যাদের অধিকাংশই পর্যটক ছিলেন। এর জবাবে ভারত ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালায়, যার মধ্যে কয়েকটি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরেও ছিল।
রবিবার রাতে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই স্থল, আকাশ এবং জলপথে সমস্ত সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পুঞ্চ ও রাজৌরি জেলার বাসিন্দারা এখনও আতঙ্কে রয়েছেন।
গত কয়েকদিন ধরে জম্মু শহর ও সীমান্তবর্তী এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণ ঘটেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও অশান্ত করে তুলেছিল।
/anm-bengali/media/agency_attachments/IpyOoxt2orL626OA8Tlc.png)
Follow Us