/anm-bengali/media/post_banners/zj5WgLkLCkwiitdv7GNX.jpg)
হাবিবুর রহমান, ঢাকা: বাংলাদেশে আরো ১২ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। তবে রোববার ও সোমবার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। শনিবার সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া। তিনি জানান, গত শুক্রবারের চেয়ে শনিবার আরো চার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন নদ নদীর জল বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্র আরো জানায়, রোববার ও সোমবার কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরিয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা রোববার ও সোমবার অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া গঙ্গা নদীর জল সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যারোববার ও সোমবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে পদ্মা নদীর জল সমতল স্থিতিশীল আছে, যা রোববার ও সোমবার বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের উত্তরা পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার কুশিয়ারা ছাড়া প্রধান নদীর জল সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা রোববার ও সোমবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
সূত্র জানায়, কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর জল বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ১১ সেন্টিমিটার। এদিকে এটা অব্যাহত থাকায় অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও চলনবিলের পানিও বাড়ছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষ। শনিবার সকাল ১০টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন।
পাউবোর শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের পানি পরিমাপক (গেজ মিটার) আবদুল লতিফ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর জল শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত ১৪ আগস্ট থেকে শুরু করে শনিবার পর্যন্ত যমুনা নদীর জল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নদীতীরবর্তী আরও কিছু নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটে জল উঠে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা। বন্যাকবলিত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন ক্ষেত, বীজতলা, আখ, পাট, তিল ও সবজিবাগানসহ বিভিন্ন ফসল।
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, ৫টি উপজেলায় ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা সেটা তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিতরণ করবেন। এ ছাড়া জেলায় ৭৬ মেট্রিক টন চাল ও আড়াই লাখ টাকা মজুত রাখা হয়েছে। কোনো এলাকায় ত্রাণের প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়মিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, যমুনায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনা নদীর জল গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বন্যা পূর্ভাবাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে যমুনা নদীর জল আরও বাড়তে পারে। তবে পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বন্যার তেমন কোনো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
অপরদিকে, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ধরলা নদীর জল সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদ-নদীর জল বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন করে প্লাবিত হতে শুরু করেছে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকাসহ বিভিন্ন এলাকা।
নদী অববাহিকার নিচু এলাকাসহ চরাঞ্চলের ঘর-বাড়িতে জল ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে নিচু এলাকার কয়েক শ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেতসহ সবজি ক্ষেত। জল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমারসহ অন্যান্য নদীর ভাঙন তীব্র হয়ে উঠেছে।
শনিবার স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের উজানে ভারতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় কুড়িগ্রামে নদ-নদীগুলোতে আরও দুই থেকে তিন দিন জল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদি পাড়া গ্রামের সাহেব আলী বলেন, দুদিন থেকে জল বৃদ্ধির ফলে বাড়ি থেকে বাহির হতে পারছি না, বাড়ির চারদিকে জল। কোথাও গেলে নৌকা ছাড়া যাওয়ার উপায় নাই। আমার তো নৌকা নাই। বড় বিপদে পড়েছি। যেভাবে জল বাড়ছে, আজকের মধ্যেই ঘরে জল ঢুকে পড়বে। বউ-বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় যাব, কী খাব, বুঝতে পারছি না।
এদিকে, টাঙ্গাইলে দিন দিন যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর জল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনার পানি বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ঝিনাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার সেমি ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। জলবন্দি হয়েছে শত শত পরিবার। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
জানা গেছে, বিভিন্ন নদীতে জল বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলে জল প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। জেলার ভূঞাপুর, নাগরপুর, কালিহাতী, বাসাইল, দেলদুয়ার, মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
জল বৃদ্ধি পাওয়ায় বসতবাড়ি জল ওঠায় বেশ কিছু পরিবার ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাসড়কের ঢালে ঝুপড়ি তুলে আশ্রয় নিয়েছে। এতে চরম দূুর্ভোগে পড়েছে তারা। সেখানে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ জল সংকট। বাসাইল-নাটিয়াপাড়া সড়কের বিলপাড়া এলাকায় রাস্তা ভেঙে গেছে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতু অংশে জল বিপৎসীমা অতিবাহিত হয়নি। এখনও বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, জেলায় যমুনা নদীসহ বিভিন্ন নদীতে জল বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা জল আরও বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানায়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। রোববার ও সোমবার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
/anm-bengali/media/agency_attachments/IpyOoxt2orL626OA8Tlc.png)
Follow Us