/anm-bengali/media/post_banners/hRnUaNSvfQoOkYiqZI0E.jpg)
হরি ঘোষ, পাণ্ডবেশ্বর: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর আতঙ্কে মন ভার গাছ পাগল রাধেশ্যাম গড়াই-এর। সরকার সম্মান না দিলেও সন্তানসম গাছগুলোকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর পঁচাত্তর বছর বয়সী গাছ পাগল রাধেশ্যাম। জামুড়িয়া দু নম্বর ব্লকের অন্তর্গত পাণ্ডবেশ্বর থানার অধীন অলিনগর গ্রামের বাসিন্দা রাধেশ্যাম গড়াই । এই বৃক্ষপ্রেমিক দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে শুধুই গাছ লাগিয়ে চলেছেন আজ পর্যন্ত ।
রাধেশ্যাম বাবুর কথায়, “তিনি রেডিওতে শোনেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা গাছ লাগাবে, পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করবে, সবুজায়ন করবে, তাদের সরকার পুরস্কৃত করবে” । সেই কথামতোই তখন থেকেই শুরু গাছ লাগানো। ভালোবাসার সবুজের প্রতি । দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আলীনগর শ্যামলা চুঁচুড়া এলাকার বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১৫০০ একর জমিতে কয়েক লক্ষ গাছ লাগিয়েছেন বলে জানান রাধেশ্যামবাবু। ধীরে ধীরে বেড়েছে পৃথিবীর তাপমাত্রা । উষ্ণায়নের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টের পথে ।
যার ফলস্বরূপ আজ পৃথিবী জলকষ্ট মহামারীতে জেরবার । বর্তমানে সারা বিশ্ব করোনা মহামারির থাবায় নাজেহাল । সারা পৃথিবীর সাথে সাথে বাদ পড়েনি ভারতবর্ষও । দেশের সাথে সাথে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাজেহাল পশ্চিমবঙ্গও । মহামারীর সংক্রমণ যেমন দিনে দিনে বেড়েছে বেড়েছে মৃত্যুর হারও । ঠিক এই মুহূর্তেই বর্তমানে দেশের সরকার তথা রাজ্যের সরকাররা উপলব্ধি করেছেন সবুজায়নের । সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের দ্বারা বিভিন্ন জায়গায় গাছ লাগানো হয় ঠিকই কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই গাছ রক্ষা করা সম্ভব হয় না । বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন গাছের প্রয়োজনীয়তা অসিম, ঠিক সেই মুহূর্তেই ত্রিশ বছর ধরে গাছ লাগিয়ে আসা বৃক্ষপ্রেমিক রাধের শ্যাম গড়াই জানান দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে সবকিছু ছেড়ে শুধুই গাছ লাগিয়েছেন তিনি । প্রায় পনেরো শ একর জায়গাজুড়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে লক্ষাধিক গাছ লাগিয়েছেন ।
রাধেশ্যাম বাবুর ছেলে সুকুমার জানান ,” বাবার গাছের প্রতি এই ভালোবাসার কারণেই তারা লেখাপড়া শিখতে পারেননি। ভালভাবে দু মুঠো খেতেও পান না । বর্তমানে দিনমজুরি করে তারাই সংসার চালান। কিন্তু গাছপাগল তাদের বাবা আজও জঙ্গলে পড়ে থাকে গাছের টানে ।” তিনি জানান, সরকার আসন্ন ঘূর্ণিঝড় “ইয়াসের” সতর্কতা জারি করেছে । সেটা শোনার পর থেকেই মনমরা হয়ে পড়েছেন তার বাবা রাধেশ্যাম । নিজের সন্তানের থেকেও গাছকে বেশি ভালোবাসেন তিনি। ঝড়ে পড়ে যেতে পারে প্রচুর গাছ সেজন্যই মনমরা তিনি ।” অন্যদিকে রাধেশ্যামবাবু জানান ,শুধুমাত্র একটু সম্মানের আশায় তিনি গাছ লাগানো শুরু করেছিলেন কিন্তু আজও পর্যন্ত কোনো সরকারি অনুদান তো দূরে থাক একটু সম্মান কেউ দেখাননি । তবে ২০১৯ সালে মধ্যমগ্রাম রোটারি ক্লাবের তরফ থেকে ভোকেশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড রোটারি রত্ন পুরস্কার হিসেবে তাঁকে “গ্রিন ম্যান অফ ইন্ডিয়া ” উপাধি দেওয়া হয় । রাধেশ্যাম বাবুর চিরকালের দুঃখ তিনি প্রকাশ করেন ,যে এলাকার জন্য, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে দীর্ঘ ত্রিশ বছর গাছ লাগিয়ে আসছেন অথচ সেই এলাকার প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো সম্মান আজও তিনি পাননি ।
রাধেশ্যামবাবু জানান, “আসন্ন ঘূর্ণিঝড় তাতে ভেঙে পড়তে পারে প্রচুর গাছ। তার ওপর গাছ মাফিয়াদের উপদ্রব । তাঁর লাগানো পনেরো শ একর জমিতে প্রায় লক্ষাধিক গাছ দিনে দিনে চুরি হয়ে যাচ্ছে গাছ মাফিয়াদের দ্বারা একা মানুষ ভয়ে তিনি কিছুই করতে পারেন না। সন্তানসুলভ গাছগুলি কেটে চুরি করে নেওয়ায় চোরেদের ব্যাপারে কিছু করতে না পারার বেদনায় ব্যথিত রাধেশ্যামবাবু ।” এদিকে গাছ পাগল রাধেশ্যাম বাবুর কথা প্রসঙ্গে জামুড়িয়ার ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক জিশানু দে জানান, তিনি সম্পূর্ণ নতুন এসেছেন এই এলাকায় ভোটের সময় সাংবাদিকদের তিনি জানান সাংবাদিকদের থেকেই তিনি রাধেশ্যামবাবু সম্পর্কে শুনলেন এবং তিনি বলেন এটা খুব আনন্দের বিষয় যে রকম একজন ব্যক্তি একক প্রচেষ্টায় সবুজায়নের অনেক কাজ করছে । তার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে তিনি দেখবার আশ্বাস দেন ।
/anm-bengali/media/agency_attachments/IpyOoxt2orL626OA8Tlc.png)
Follow Us